দৈনিক ঢাকা সংবাদ: পোশাকশ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে চলমান আলোচনার মধ্যে হঠাৎ তাদের আন্দোলনে নামা এবং জ্বালাও-পোড়াও করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে তিন দফা পোশাকশ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে দিয়েছি। এরপরও তারা যখন বেতন বাড়ানোর দাবি করেছে, আমাদের মন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছে, এ বিষয়ে আলোচনাও চলছে। কথা ছিল ডিসেম্বর মাস থেকেই তাদের মজুরি বাড়ানোর ব্যবস্থা করার। কত বাড়বে না বাড়বে সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এই আলোচনার মধ্যেই হঠাৎ তাদের মাঠে নামানো এবং সেখানে জ্বালাও-পোড়াও করা, কোনো কোনো কারখানায় আগুন দেওয়া খুবই দুঃখজনক।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে যোগদান উপলক্ষে সম্প্রতি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে তিনদিনের সরকারি সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
গাজীপুরে বেতন বাড়ানোর দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের লাগাতার আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যে কারখানা থেকে রুটি-রুজি আসে, যে কারখান থেকে খাবার খাও, সেই কারখানা ধ্বংস করলে তোমাদের চাকরিটা থাকবে কোথায়, সবাইকে তো গ্রামে ফিরে যেতে হবে। এটা তো বাস্তবতা।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি তখন গার্মেন্টসকর্মী কেন, সবাই ৮০০ টাকা বেতন পেতো। আমাদের সরকারের আমলে সেটা ১৬০০ টাকা করি। কিন্তু আমরা সরকার থেকে চলে গেলে বিএনপি সেটা কার্যকর করেনি। কার্যকর করেছিল ২০০৬ সালে এসে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর ধাপে ধাপে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছি। ১৬০০ টাকা থেকে প্রথম ধাপে বাড়িয়ে তিন হাজার ৫০০ টাকা, দ্বিতীয় ধাপে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা এবং তৃতীয় ধাপে সেটা বাড়িয়ে আট হাজার ৩০০ টাকা করি দিয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, (বর্তমান সরকারের টাকা তিন মেয়াদে) মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে তিন দফা পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়ে আট হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করেছি। শুধু তাই না, তাদের বাচ্চাদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি পোশাক কারখানায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সেগুলোকে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, পোশাকশ্রমিকদের টিফিনের ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং তাদের জন্য সব রকমের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। করোনাকালীন যখন মালিকরা বেতন দিতে পারছিল না সেই বেতনের টাকা আমরা সরকারের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি শ্রমিকদের হাতে পৌঁছে দিয়েছি।
তিনি বলেন, জিনিপত্রের দাম বেড়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, এটা সবাই জানে। এটা শুধু বাংলাদেশে না, বিশ্বজুড়েই। বরং বাংলাদেশের চেয়েও বিদেশে আরও খারাপ অবস্থা। আমরা এক কোটি মানুষকে বিশেষ পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। যেন স্বল্পমূল্যে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনতে পারে।
তিনি বলেন, পোশাকশ্রমিকদের জন্য রেশন দিতে চাইলে মালিকদের সে ব্যবস্থা করে দেওয়া আছে। এমনকি অল্প টাকায় তাদের খাদ্যসামগ্রীও দেওয়া হয়ে থাকে। সে সুবিধাটাও আমরা করে দিয়েছি।
পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনে গাজীপুরে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সত্যিই এজন্য খুব দুঃখ পাচ্ছি। আর এই পুলিশদের হত্যা, সাংবাদিদের ওপর আক্রমণ- আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
দৈনিক ঢাকা সংবাদ.কম/এসএম
আরও পড়তে পারেন…