সাইবুর রহমান সুমন জেলা প্রতিনিধিঃ-বেনাপোল পৌরসভার বাস্তবায়নে পরিচালিত বেনাপোল বাজারস্থ “নিত্যহাট” মার্কেটে অবস্থিত “নগর মাতৃ সদন” এ অপচিকিৎসায় এক প্রসূতি শিশু’র মৃত্যু হয়েছে।
প্রসূতি মা নাজমা খাতুন(৩০) এর স্বামী মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, “বেনাপোল নগর মাতৃসদনে শিশু ডেলিভারীর জন্য শুক্রবার(৭ অক্টোবর) রাত ৯ টার দিকে আমার স্ত্রী নাজমা খাতুন(প্রসূতি মা) কে ভর্তি করি।
রাতে সেখানকার চিকিৎসক ডাঃ নাইমুল হাসান(নাইম),মেডিকেল অফিসার,এমবিবিএস,সিএমইউ(সনোলজিস্ট) এর সাথে আমার স্ত্রী’র ডেলিভারীর ব্যাপারে কথা হয়। সহজেই ডেলিভারী হবে, কোন প্রকার সিজার করা লাগবে না বলে চিকিৎসক আমাকে জানান এবং সকালে ডেলিভারীর সব ব্যাবস্থা করবেন বলে আশ্বস্থ করেন।
পরদিন শনিবার(৮ অক্টোবর) সকাল ৯ টার দিকে রুগী নাজমা(আমার স্ত্রী)কে আল্ট্রাসনো করতে হবে,সেই মোতাবেক তারা আল্ট্রাসনো করে। এরপর মাতৃসদনের কর্তব্যরত নার্স এবং কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে আমাকে বলে প্রসূতিকে নরমাল ডেলিভারী করা সম্ভব নয়,সিজার করতে হবে।
মাতৃসদন কর্মকর্তাদের কথায় আমি সিজার করার জন্য সম্মতি প্রদান করি। পরে বেলা ১২ টার দিকে ডাঃ নাইমুল হাসান(নাইম) সিজার করার সব পরিকল্পনা নিয়ে আমার স্ত্রী প্রসূতি নাজমাকে অপারেশন রুমে নিয়ে যায়। প্রায় আধা ঘন্টা পরে আমাকে জানানো হয় যে, বাচ্চাকে তারা বাঁচাতে পারেননি,প্রসূতি মায়ের শরীর সুস্থ আছে বলে চিকিৎসক আমাকে জানান। এরপর আমি এবং আমার পরিবারে সকল সদস্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি”।
শিশু মৃত্যু’র খবর মূহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বেনাপোল বাজারে। স্থানীয় সামাজিক এবং গণমাধ্যম কর্মীরা ছুঁটে যান নগর মাতৃসদনে। মৃত শিশু’র পিতা মনিরুজ্জামান মাতৃসদন এর ম্যানেজার পলাশ এবং অপচিকিৎসার জন্য চিকিৎসক নাইমুল হাসান কে দোষারোপ করে অভিযোগ তোলেন।
এ ব্যাপারে গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া কেন একজন পুরুষ মেডিকেল অফিসার নাইমুল ইসলাম ও এ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক সুচিন্ত কুমার দত্ত কে দিয়ে সিজারিং করা হলো,এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি মাতৃসদনে দায়িত্বরত প্রজেক্ট ম্যানেজার পলাশ মিয়া।
ঘটনার পরপরই নগর মাতৃসদনে ছুঁটে আসেন শার্শা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও বেনাপোল পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তার অনুপস্থিতে প্রতিনিধি হয়ে শার্শা উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) ফারজানা ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তদন্ত পূর্বক প্রসাশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে শিশু মৃত্যু’র ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্থ করেন।
এদিকে, প্রসূতি মৃত শিশু’র পিতা মনিরুজ্জামান নিজে বাদী হয়ে নগর মাতৃসদন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শিশু মৃত্যু’র কারণ ও অপচিকিৎসার অভিযোগ এনে বেনাপোল পোর্টথানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিশু লাশের এখনও দাফনের ব্যবস্থা করা হয়নি, প্রসূতি মা নাজমা খাতুন অসুস্থ হয়ে বেডে শোকে কাতরাচ্ছেন।
অভিযোগ পেয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার পক্ষ থেকে এস আই অমিত কুমার দাস ঘটনাস্থল নগর মাতৃসদনে যান এবং রুগীর খোঁজ খবর নেন। ক্ষতিগ্রস্থের পক্ষ থেকে লিখিত এজাহার দায়ের করলে থানার পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ঐ পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
উল্লেখ্য,গত সেপ্টেম্বর/২০২২ ইং তারিখ অত্র উপজেলাধীন বাগআঁচড়া বাজারস্থ একটি ক্লিনিকে অপচিকিৎসার কারণে সিজারিং এ এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়। এ সকল ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে,সিজারের রোগী ভর্তি করানোর সাথে সাথে কতৃপক্ষ বন্ডসই করানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এরপর তাদের ইচ্ছেমত ছেড়া কাটা করে। কখনও বাচ্চা বাঁচেতো মা মারা যায়, মা বাঁচে তো বাচ্চা মারা যায়। এ রকম অবস্থা চলছে ক্লিনিক গুলোর। স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা কি ভাবছেন আল্লাহই জানেন। তবে উনাদের উচিৎ বিষয় গুলো তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। তা হলে চিকিৎসা জগতে আর ব্যবসা করার কথা মনে থাকবে না।