বর্তমান সরকারের কাছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তে কমিশন গঠনে দাবি জানিয়েছেন শহীদ বিডিআর মহাপরিচালক শাকিল আহমেদের ছেলে ব্যারিস্টার রাকিন আহমেদ।
শনিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শহীদ মেজর জেনারেলের শাকিল আহমেদের পরিবারসহ ১৭টি শহীদ সেনা পরিবার এবং বিডিআর কল্যাণ পরিষদ যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
এ সময় সেনাবাহিনীর ১৭টি শহীদ পরিবারের সদস্য এবং বিডিআর কল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টারা ৯ দফা দাবি জানান।
সেখানে রাকিন আহমেদ বলেন, সরকারকে জানা উচিত ১৮ হাজার বিডিআর সদস্য এক কাতারে রয়েছেন। এসব সদস্যদের মধ্যে কিছু মানুষ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, আবার কেউ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের জন্য সরকার কোনো পদক্ষেপ নিলে বিডিআর পরিবারের পক্ষ থেকে খুশি হতাম।
তিনি আরও বলেন, আমার বাবা আপনাদের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। আপনাদের আগেও পরিবার হিসেবে দেখতাম, এখনও দেখি। আপনারা আমার ভাই হিসেবে বলেন, আর সন্তান বা অভিভাবক বলেন। আমরা চাই একটা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নির্দোষ বিডিআর সদস্যরা মুক্তিপাক আর দোষীরা শাস্তির আওতায় আসুক। কিন্তু বাকি ১৮ হাজারের বেশি বিডিআর সদস্য এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। তাও তাদের সন্তানরা রাস্তায় বের হতে পারে না, তাদের খুনির সন্তান বলা হয়।
রাকিন অভিযোগ করে বলেন, ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে আওয়ামী লীগের দোসররা এখনও সরকারে রয়েছে। আমাদের ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়াতে হবে। জাতীয়তাবাদী শক্তির পাশে দাঁড়াতে হবে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জনস্বার্থে কাজ করবেন বলে বিশ্বাস করি। সরকারের কাছে ভালো কিছু আশা করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশ একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে যাবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ও গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করছে।
সম্প্রতি কচুক্ষেত মোড়ে সেনাবাহিনীর গাড়িতে যে আগুন দেওয়া হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
৯ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে
১. পিলখানা হত্যাকাণ্ডটি বিদ্রোহ না বলে এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা;
২. ঢাকাসহ সারাদেশে বিডিআর ব্যাটালিয়ন সেক্টরে গঠিত বিদ্রোহ আইনের প্রহসনের বিশেষ আদালতকে নির্বাহী আদেশে বাতিল করা;
৩. চাকরিচ্যুত সব পদবির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জওয়ানদের পূর্ণ সুযোগ সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল;
৪. হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্তের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন;
৫. পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শাহাদত বরণকরী ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া;
৬. ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে পিলখানা ট্রাজেডি দিবস হিসেবে ঘোষণা;
৭. ঘটনা পরবর্তী যেসব নিরীহ জোয়ানদের তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনপূর্বক হত্যা করা হয়েছে, তার তালিকা প্রকাশসহ মৃত সব সদস্যের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে;
৮. ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে ঘটনার সময় যেসব সংস্থার সদস্যরা প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পরিকল্পনামতে তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিরীহ নিরপরাধ জোয়ানদের নির্যাতন ও বিদ্রোহের মিথ্যে মামলার আসামি করে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাটালিয়ন ও সেক্টরে হাজার হাজার বিডিআর সদস্য ও পরিবারকে পথে বসিয়েছে, তাদের শনাক্ত ও আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ
৯. পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় খালাসপ্রাপ্ত অথচ প্রহসনের বিস্ফোরক মামলায় বিনা বিচারে দীর্ঘ ১৬ বছর কারাবন্দি জোয়ানদের অনতিবিলম্বে জামিন/মামলা প্রত্যাহারপূর্বক খালাস দিতে হবে।