ঢাকা সংবাদ প্রতিবেদনঃ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে অস্থিরতা শুরু হয় দেশের পুঁজিবাজারে। সূচকের টানা পতনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থায় দরপতনের গতি শ্লথ করতে গত ৮ মার্চ শেয়ারদর কমার সীমা ১০ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর দেড় মাস পর গতকাল এ সীমা ৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করেছে কমিশন।
গতকাল জারি করা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের ক্ষেত্রে শেয়ারদর নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে সাময়িকভাবে শেয়ারদর কমার সীমা বা সার্কিট ব্রেকার ২ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ আরোপ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শেয়ারদর বাড়ার সীমা আগের মতোই ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রয়েছে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। এ আদেশের ফলে আজ থেকে কোনো শেয়ারের দর আগের দিনের সমাপনী মূল্যের চেয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে।
এ বছরের ৮ মার্চ শেয়ারদর কমার সীমা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করার পর থেকেই পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ কমতে থাকে। ক্রেতা না থাকার কারণে প্রতিদিনই অনেক শেয়ারের লেনদেন শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। এ অবস্থায় বাজারসংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে শেয়ারদর কমার সীমা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার দাবি উঠতে থাকে। এর মধ্যে একদিন গুজব রটে যায় যে শেয়ারদর কমার সীমা আবারো আগের মতো ১০ শতাংশ করতে যাচ্ছে বিএসইসি। এতে আতঙ্কিত হয়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিতে থাকে। ফলে সেদিন বড় দরপতন হয় পুঁজিবাজারে। অবশ্য পরে বিএসইসির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করা হয় যে এ সীমা আপাতত বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। সম্প্রতি পুঁজিবাজারে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ কমে ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়। বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও কমতে থাকে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে লেনদেন খরা কাটাতে শেয়ারদর কমার সীমা কিছুটা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে কমিশন শেয়ারদর কমার সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বাজার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় এটি বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এটি আগের মতোই ১০ শতাংশ করা হবে বলে জানান তিনি।
পুঁজিবাজার পরিস্থিতি: গতকাল লেনদেন শুরুর পর থেকেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সে পয়েন্ট যোগ হতে থাকে। মাঝে কিছুটা নিম্নমুখিতা দেখা গেলেও দিনশেষে ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৬০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৬ হাজার ৫৩০ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ফরচুন সুজ, রবি আজিয়াটা ও বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের।
ডিএসইতে গতকাল প্রায় ৬০৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৫৯৯ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৯টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২৬৯টির, কমেছে ৭৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩২টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ২২ দশমিক ৩ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বিবিধ খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ দখলে নিয়েছে প্রকৌশল খাত। ১০ দশমিক ১ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। চতুর্থ অবস্থানে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৯ শতাংশ। এছাড়া বস্ত্র খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। গতকাল কাগজ ও মুদ্রণ খাতে সবচেয়ে বেশি ৪ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে দশমিক ১ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্নের ভিত্তিতে শীর্ষে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স গতকাল ১৩১ পয়েন্ট বেড়ে ১১ হাজার ৬৬৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ৫৩৮ পয়েন্টে। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই গতকাল ২১৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৯ হাজার ৪৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১৯ হাজার ২৩২ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৬২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭২টির, কমেছে ৬৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৪টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৩২ কোটি ৪০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
দৈনিক ঢাকা সংবাদ.কম/এসআর
আরও পড়ুন……